হরিপদ কাপালী নতুন ধানের জাত কীভাবে খুঁজে পেলেন?

হরিপদ কাপালী যাকে  কৃষি বিজ্ঞানী বলা হয়। যিনি গ্রীস্মের রোদ মেখে, শরীরের ঘাম দিয়ে কৃষি বিজ্ঞানীর খাতায় নাম লিখেছেন । যার নেই আধুনিক কোন আধুনিক গবেষণা সরঞ্জ, নেই কোন ল্যাবরেটরি। ফসলের মাঠ কে বানিয়েছে ল্যাবরেটরি আর গায়ের ঘাম কে গবেষণার সরঞ্জাম বানিয়ে আবিষ্কার করেছে হরি ধান । 

হরিপদ কাপালী নতুন ধানের জাত কীভাবে খুঁজে পেলেন?


হরিপদ কাপালী নতুন ধানের জাত কীভাবে খুঁজে পেলেন

হরিপদ কাপালী ছিলেন যশোর ঝিনাইদহের এনায়েতপুর গ্রামের একজন সাধারণ কৃষক। তার। শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত। তার বাবার নাম কুঞ্জু লাল আর মায়ের নাম ছিল সরোধনী । তার জন্মের আগে মারা যায় তার বাবা মা । ১৭ বছর বয়সের তিনি বিবাহ বন্ধ আবদ্ধ হন । তার স্ত্রীর নাম সুনিতী বিশ্বাস। তার কোন সন্তান ছিল না ।


একদিন সকালে হরিপদ কাপালী দেখতে পায় তার ইরি ধান ক্ষেতে অন্য ধর্মে একটি ধানের শীষ। সেই ধানের শীষ টি ছিল খুব পরি পুষ্ট আর ধান গাছটি কান্ড ছিল মোটা । 
হরিপদ কাপালী সেই ধান গাছ টি দেখে আলাদা করে রাখলেন । আর সেই ধানের বীজ সংগ্রহ করলেন।

তার পরেন বছর তিনি সেই সংরক্ষণ কৃত ধান বীজ দিয়ে কিছু টা জায়গায় আবাদ করেন নিজের ক্ষেতে । আর সে দেখতে পেল তার ধানের ফসল খুব ভালো হয়েছে। আর সেই ফসল থেকে আরো কিছু বীজ সংরক্ষণ করেন তিনি। আর পর পর তিন বছর তিনি সেই ধান চাষ করেন ।সে দেখতে পায় তার ফসলের পরিমাণ খুব ভালো হয়েছে।তাই তার পরের বছর তিনি তার জমির ৯০% ধান প্রতিবেশী কৃষকদের চাষ করার জন্য উপহার দেয়।

আর কৃষকদের বলেন এই ধানের ফসল অনেক বেশি।কিন্তু কৃষকরা সেটা বিশ্বাস করতে পারে না।কারণ তারা সেই সময় উচ্চ ফলনশীল বি আর ১১ এবং স্বর্ণাধান চাষ করেন।
তখন কৃষকরা বি আর ১১ ও স্বর্ণাধানের পাশাপাশি হরিপদের  দেওয়া হরিধান চাষ করেন। 

সেই বছর কৃষকরা দেখতে পাই বিআর ১১ ও স্বর্ণাধানের থেকে হরিপদের দেওয়া ধান টি বেশি ফলন হয়েছে।
তখন পাশাপাশি সকল গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল হরিপদে ধানের কথা।সবাই ছুটে আসলো হরিপদের কাছে ধান নেওয়ার জন্য। সে বছর সকলকেই সব হরিপদের কাছ থেকে ধান নিয়ে চাষ করল নিজেদের জমিতে।

তখন কৃষকরা লক্ষ্য করল আসলেই তার ধানের ফলন বেশি। আর সেদিনের উৎপাদন খরচ অন্য ধরনের তুলনায় অনেক কম। আর এই ধান গাছের কান্ড মোটা, লম্বা এবং শক্ত যার ফলে পোকায় ফসল সহজে নষ্ট করতে পারে না। হরি ধানের লম্বা বেশি হওয়ায় খড়ের পরিমাণও বেশি হয়। 

১৯৯৪ সালে ঝিনাইদহের সকল জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে হরিপদ এর এই ধান ।কিন্তু কেউ জানে না ধানের নাম কি ও পরিচয় কি।
কিন্তু ফলন ভালো হওয়ায় সবাই এই ধান চাষ করতে শুরু করবে। আবার অনেকেই এই ধানের বীজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। 

হরিপদ ছিলেন অত্যন্ত লোক দরদি একজন মানুষ।তিনি তখন ও সবাইকে বিনামূল্যে ধানের বীজ দিতেন।সকল কৃষক তার এই ধানের ফলন দেখে মুগ্ধ হয়। তাই সকল কৃষক মিলে এই ধানের নাম দেয় হরি ধান ।

১৯৯৫ সালে প্রথম দৈনিক লোকসমাজ পত্রিকা থেকে একটা প্রতিবেদন প্রকশিত হয়ে হরিপদের হরি ধান নিয়ে ।

লোকসমাজ দৈনিক লোকসমাজের প্রতিবেদনের ফলে বিষয়টি স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নজরে আসে। তখন হরিপদের থেকে বিষ নিয়ে কিছু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর কাছে পাঠানো হয়।কিন্তু তারা জানায় এই ধানটি বি আর ১১ ও স্বর্ণ ধানের মতো। হরিধান কে তারা অন্য জাতি হিসেবে মানতে চাইলো না।

তখন ব্রাক প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ, নিজে ধানটির নেয়ে গবেষণা করতে চাইলে ।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেবা ইসলাম সিরাজকে তিনি অনুরোধ করে ডেকে নিলেন তার এই গবেষণায়। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে পাঠানো হলো হরিধান ও স্বর্ণ ধান।সেখান থেকে রোকিয়া বেগম ও তার সহকর্মীরা জানালেন হরিধান ও স্বর্ণ ধান দুই টা কোন রকম এক ধান নয়।


তখন চারদিকে জানাজানি হয়ে গেল হরিপদের এই ধানের কথা। বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রতিবেদন হলো তার এই ধান নিয়ে ।তারপর থেকে বিশ্বের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ে হরিপদের হরি ধানের কথা।এমন কি সেই সময় নবম ও দশম শ্রেণীর বই হরিপদ কাপালী  কথা উল্লেখ করা হয়।

হরিপদ কাপালী কয় টি পুরস্কার পায়

হরিপদ ঢাকা রোটারি ক্লাব,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর,গণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র সহ ১৬ টি পদক দেবা হয় ।

মৃত্যু

হরিপদের মৃত্যুর সময় বয়স ছিল ৯৫ বছর। তিনি ২০১৭ সালে ৬ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url